Talent Stationary
icon 0
icon

Your order.

There are no items in your Cart.

পাঠ্য বই পড়তে ভালো লাগে না কেনো?

February 01, 2024 03:44:37 PM
Cover

২০১৩ সালে করা একটি গবেষণায় ফাংশনাল MRI স্ক্যান ব্যবহার করে একটি উপন্যাস পড়ার সময় মস্তিষ্কে কী রকম প্রভাব পড়ে, সেটা পর্যবেক্ষণ করা হয়। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ২১ জনকে ৯ দিন ‘পম্পেই’(Pompeii) উপন্যাস পড়তে দেয়া হয়। সেই উপন্যাস পড়াকালে যখন উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে থাকে, তখন মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই গবেষণায় দেখা যায়, এই ৯ দিনের বই পড়ার পরের সময়ে অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কের কানেক্টিভিটি বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে Somatosensory Cortex অংশে, যে অংশের কাজ শারীরিক সংবেদনশীলতার প্রতি সাড়া দেয়া। এরপর ২০১৫ সালের আরেকটি গবেষণায় MRI স্ক্যানের মাধ্যমে দেখা যায়- বই পড়ার সময় মস্তিষ্কের খুব জটিল নিউরাল নেটওয়ার্ক এবং সিগনাল সক্রিয় থাকে। আর যতই আপনার বই পড়া বৃদ্ধি পায়, ততই সেই তা শক্তিশালী হয়ে ওঠে!

পাঠক, আপনি কি বুঝতে পারছেন কি বিষয়ের উপকার বর্ণনা করতে যাচ্ছি? হ্যাঁ, বই পড়ার উপকার। কেনো আমাদের নিয়মিত বই পড়া উচিত। এই শিরোনামেই উপরিউক্ত গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়।

বই পড়ার প্রবণতা না থাকলেও সবারই যে বাধ্য হয়ে পাঠ্যবই পড়া লাগেই! সেই হিসেবে বলা যায়- আমরা সবাই বই পড়ি, তবে সেই বই পড়া যে আমাদের কতটা আনন্দ দিয়ে থাকে সেটাই প্রশ্ন! কেননা, বই পড়ার কারণে প্রধান যে প্রভাব আমাদের মনে পড়া উচিৎ তা হচ্ছে ‘আনন্দ’ অনুভব করা। আর, আমার মনে হয় না যে জোর করে পাঠ্যবই পড়ে কেউ সেই আনন্দ অনুভব করে। উল্টো যারা পাঠ্যবইয়ের বাইরে উপন্যাস বা প্রবন্ধের বই পড়ে, তাদের অনেককেই পড়ালেখায় ‘অমনোযোগী’ আখ্যা দেওয়া হয়। অনেক সময় কেউ বই পড়তে দেখলে প্রশ্ন করে বসে, “এসব বই পড়ে লাভ কী?” তখন অনেকেই আমরা যথাযথ উত্তর দিতে পারি না, কেননা অনেকেই বই পড়ে কেবলমাত্র আনন্দের জন্য। সেক্ষেত্রে যদি এই উত্তর দেয়া হয়, তাহলে বোঝাই যায় যে প্রশ্নকর্তা হেসেই উড়িয়ে দেবে।

তবে গবেষণায় দেখা গিয়েছে– যেসব ব্যক্তি বিভিন্ন উপন্যাস পড়ে থাকে, বিশেষত, যেসব উপন্যাসের চরিত্রগুলো অভ্যন্তরীণ জীবন অন্বেষণ করে, তাদের অন্যদের তুলনায় পরিস্থিতি উপলব্ধির ক্ষমতা বেশি থাকে। গবেষকরা একে ‘Theory of Mind’ বলেন। এটি একজন মানুষের সামাজিক বন্ধন অটুট রাখতে এবং ভালো অবস্থা বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত জরুরি। তবে বছরে মাত্র একটি বই পড়লে এই উপকার পাওয়া যাবে না,প্রতিদিন বই পড়ার অভ্যাস গড়তে হবে। এছাড়াও বই পড়ার ফলে বার্ধক্যকালীন স্নায়বিক সমস্যা প্রতিরোধ হয়। আমেরিকার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অন এজিং পরামর্শ দিয়েছে, নিয়মিত বই পড়া একজন মানুষের বার্ধক্যকালীন স্নায়বিক সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে। যদিও গবেষণা সরাসরি এটা দাবি করে না যে নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস স্নায়বিক রোগ (অ্যালঝেইমার্স , ডিমেনশিয়া ইত্যাদি) প্রতিরোধ করে। তবে দেখা গেছে, নিয়মিত বই পড়া এবং জটিল গাণিতিক সমস্যা নিয়ে চর্চাকারীদের স্নায়ু অন্যদের তুলনায় উন্নত অবস্থায় থাকে। তবে এক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি নিজের জীবনে যত আগে থেকে এই অভ্যাস গড়ে তুলবেন, ততটাই তার জন্য কার্যকরী হবে। ৩০ মিনিটের বই পড়া রক্তচাপ, হৃদস্পন্দন ইত্যাদি স্বাভাবিক রাখতে কার্যকর প্রমাণিত হয়।

এখন আসি পাঠ্যবই পড়তে কেনো এতো সমস্যা। পাঠবইয়ের বিষয়বস্তু কখনোই অনুপকারি হতে পারে না। সেটা ক্ষেত্র বিশেষে তর্কে রুপ নিলেও সার্বিক প্রেক্ষাপটে এমনটা হবার কথা নয়ই। কারণ উপকারি বিষয়বস্তুর ভিত্তিতেই শিক্ষা প্রায়োগিক জীবনে উপকার বয়ে আনবে এটাই পাঠ্যবইয়ের উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে বিপর্যয় মানেই জাতির মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেয়া। সে যাজ্ঞে, পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তু আদৌ কি কাজে লাগে, এটাই আমরা ব্যাখ্যা করে বোঝাতে পারি না শিক্ষার্থীদের। আমার এখনো মনে আছে বীজগণিত কেনো করা উচিত বা এটা জীবনে কি কাজে আসবে সেটা স্যার ব্যাখ্যা না করে উলটো ইচড়ে পাকা আখ্যা দিয়ে যাচ্ছেতাই পিটিয়েছিলো! এই ঘটনাই সারা জীবনের জন্য পাঠ্য বই পড়ার ক্ষেত্রে নিরানন্দ করতে যথেষ্ঠ ছিলো। আসলে কৌতূহলী মনকে থামানো যায় না শাসনের বেড়াজালে। আন্তরিক শিক্ষা এবং বোঝানোর ভিত্তিতেই যেকোনো বিষয় মানুষের কাছে 'মানার' উপযোগী করে তোলা যায়। পাঠ্যবই যখন গুণগত শিক্ষা, রুচিশীল রচনা, আন্তরিক উপস্থাপনা এবং বোধগম্য আলোচনার মাধ্যমে লেখা হবে, ক্লাসে পাস করানো এবং খাতায় মুখস্থ লেখার উদ্দেশ্যে বোঝানো হবে না, বাসায় দায়িত্বশীল অভিভাবক লাঠি নিয়ে গতানুগতিক স্টাইলে প্রতিদিন সন্ধ্যায় পড়তে বসাবেনা, তখন পাঠ্যবইও আনন্দের হবে। তাই নয় কি?

Information Source - National Journal & Roar Media Bangla
#talent_stationery #Education #kidseducation #booklover #childdevelopment #QualityEducation

ionicons-v5-q