Talent Stationary
icon 0
icon

Your order.

There are no items in your Cart.

টিনেইজ লাইফ, বেদনা নাকি সুখের?

November 08, 2023 01:01:33 PM
Cover

জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় কোনটা এই প্রশ্নের উত্তর দেয়াটা কঠিন হলেও সবাই কমবেশি একমত হবেন একটা সময়ের ব্যাপারে। টিনেইজ লাইফ। আমরা যদি ফেলে আসা টিনেইজ টাইমে একটু ফিরে তাকাই তাহলে দ্বিমত করার সুযোগ থাকবেনা। এই সময়ে বেড়ে ওঠা শারীরিক পরিবর্তনের প্রভাব সহ বড়দের চোখে সবকিছুই সার্বিকভাবে একটি বয়কট যোগ্য প্যাকেজ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মনে হয় সবচেয়ে ভালো ধরতে পেরেছেন টিনেইজ লাইফকে। 'ছুটি' গল্পে মাত্র তিন প্যারায় তিনি খুবই সুন্দরভাবে তুলে এনেছেন এই কঠিন সময়ের অসহায়ত্ব। তিনি লিখেছেন -

বিশেষত, তেরো-চৌদ্দ বৎসরের ছেলের মতো পৃথিবীতে এমন বালাই আর নাই। শোভাও নাই, কোনো কাজেও লাগে না। স্নেহও উদ্রেক করে না, তাহার সঙ্গসুখও বিশেষ প্রার্থনীয় নহে। তাহার মুখে আধো-আধো কথাও ন্যাকামি, পাকা কথাও জ্যাঠামি এবং কথামাত্রই প্রগল্‌ভতা। হঠাৎ কাপড়চোপড়ের পরিমাণ রক্ষা না করিয়া বেমানানরূপে বাড়িয়া উঠে; লোকে সেটা তাহার একটা কুশ্রী স্পর্ধাস্বরূপ জ্ঞান করে। তাহার শৈশবের লালিত্য এবং কণ্ঠস্বরের মিষ্টতা সহসা চলিয়া যায়; লােকে সেজন্য তাহাকে মনে মনে অপরাধ না দিয়া থাকিতে পারে না। শৈশব এবং যৌবনের অনেক দোষ মাপ করা যায়, কিন্তু এই সময়ের কোনো স্বাভাবিক অনিবার্য ত্রুটিও যেন অসহ্য বোধে হয়।

সেও সর্বদা মনে-মনে বুঝিতে পারে, পৃথিবীর কোথাও সে ঠিক খাপ খাইতেছে না; এইজন্য আপনার অস্তিত্ব সম্বন্ধে সর্বদা লজ্জিত ও ক্ষমাপ্রার্থী হইয়া থাকে। অথচ, এই বয়সেই স্নেহের জন্য কিঞ্চিৎ অতিরিক্ত কাতরতা মনে জন্মায়। এই সময়ে যদি সে কোনাে সহৃদয় ব্যক্তির নিকট হইতে স্নেহ কিম্বা সখ্য লাভ করিতে পারে তবে তাহার নিকট আত্মবিক্রীত হইয়া থাকে। কিন্তু তাহাকে স্নেহ করিতে কেহ সাহস করে না; কারণ সেটা সাধারণে প্রশ্রয় বলিয়া মনে করে। সুতরাং তাহার চেহারা এবং ভাবখানা অনেকটা প্রভুহীন পথের কুকুরের মতো হইয়া যায়।

অতএব, এমন অবস্থায় মাতৃভবন ছাড়া আর-কোনো অপরিচিত স্থান বালকের পক্ষে নরক। চারি দিকের স্নেহশূন্য বিরাগ তাহাকে পদে পদে কাটার মতো বিধেঁ। এই বয়সে সাধারণত নারীজাতিকে কোনো-এক শ্রেষ্ঠ স্বর্গলোকের দুর্লভ জীব বলিয়া মনে ধারণা হইতে আরম্ভ হয়, অতএব তাঁহাদের নিকট হইতে উপেক্ষা অত্যন্ত দুঃসহ বোধহয়।
.
গুরুজির ছুটি গল্পটি শেষ হয় কিশোর ফটিকের এক করুণ পরিণতি দিয়ে। আহারে! রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট এই গল্পটি আমাদের বয়ঃসন্ধিকালের একজন বালকের জন্য স্নেহ-মমতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝিয়ে দেয়। বয়ঃসন্ধিকাল সময়টা খুবই অদ্ভুত এবং প্যাথেটিক। বড় হওয়া এবং ছোট থাকার মাঝামাঝি এই সময়টার উপর নির্ভর করে একজন বালকের জীবন কি ভাঙ্গবে নাকি গড়বে। এই সময়ে সঠিক পথপ্রদর্শন ও পরিমিত স্নেহ মমতা না পেলে তা একজন বালকের জীবন কতটা ভয়ংকর হতে পারে, তা ‘ছুটি’ গল্পের ফটিকের পরিণতি পড়ে কিছুটা আন্দাজ করা যায় । আপনি যদি এই বয়সের ব্যাপারে একজন অনুসন্ধানীর প্রতিবেদন খোঁজ করেন তাহলে এই বইটি পড়ুন - Brainstorm: The Power and Purpose of the Teenage Brain.
Daniel J. Siegel এর লেখা বইটি বিস্মিতই করবে না বরং আমাদের জ্ঞানে থাকা টিনেইজ সময়ের ব্যাপারে যেই অপ্রতুলতা রয়েছে সেই ব্যাপারে উপলব্ধি করতে পারবেন। আমি এখানে 'অপ্রতুলতা' শব্দটি বিশেষ অর্থে ব্যবহার করেছি কারণ অপ্রতুলতা শব্দটি অসীম চাহিদার তুলনায় সীমিত যোগানের অবস্থা প্রকাশ করতে ব্যবহার করা হয়। ঠিক তেমনিভাবে টিনেইজ বা কিশোর বয়স নিয়ে আমাদের যেই পরিমাণ সীমিত জ্ঞান সেটা অসীম জ্ঞানের চাহিদায় 'কম' শব্দের সমার্থক হিসেবে লিখতে পারলাম না। আমরা মনে করি এই বয়সে ঝাড়ি মারা,ধমকি দেয়া এবং কথায় কথায় শাসন না করলে বখে যাবে। বাস্তবতা শেখাতে অনেকেই আবার এমন সব কাজ করে যা তাদের ব্রেইণে ভালোই প্রভাব ফেলে। যেমন ঘর থেকে বের করে দেয়া, শারীরিক এবং মানসিকভাবে এবিউজড করে ইত্যাদি। আমরা মনে করি তাদের দৃষ্টিতে তারা সব কিছুকে যেমন দেখে তার সবটাই অন্যায়!
জীবনে অন্যকে বুঝতে হলে নিজের মাধ্যমেই বোঝার মাঝেই রয়েছে সত্যিকার সহমর্মিতা।

ionicons-v5-q